গর্ভাবস্থায় একটুখানি অসাবধানতা হয়ে উঠতে পারে আপনার ও আপনার অনাগত শিশুর জন্য
অনেক বড় ঝুঁকি। আপনার প্রসাবে সামান্য জ্বালাপোড়া ও হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক
ইনফেকশনের প্রথম লক্ষণ।বর্তমানে ইউরিন ইনফেকশন খুব পরিচিত একটি রোগ।
গর্ভাবস্থায় শরীরের ছোট ছোট পরিবর্তন অনেক সময় বড় ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে। ইউরিন
ইনফেকশন বা প্রসাবে সংক্রমন তার মধ্যে একটি। গর্ভাবস্থায় প্রসাবে ইনফেকশনের গোপন
লক্ষণ ও করনীয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে নিচের পোস্টটি পুরোটায় পড়ুন
বর্তমান সময়ে খুব পরিচিত হয়ে উঠেছে যে রোগটি সেটা হলো প্রসাবে ইনফেকশন। তবে
গর্ভাবস্থায় প্রসাবে ইনফেকশন হয়ে উঠতে পারে মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শরীরে নানা রকম হরমোনাল পরিবর্তনের কারনে ব্যাকটেরিয়া খুব
সহজে প্রসাবের পথে সংক্রমণ করতে পারে। নারী পুরুষ সবারই প্রসাবে
ইনফেকশন হতে পারে।
তবে নারীদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমনের আশঙ্কা বেশি। উপসর্গ গুলো কিছু সময় হালকা
হওয়ায়, অনেক সময় গর্ভবতী মায়েরা এই ইনফেকশনে ভুগলেও বুঝতে পারে না। যেমন-
প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া হওয়া, ঘন ঘন প্রসাবের চাপ হলেও কম পরিমাণে প্রসাব হওয়া,
তল পেটে ব্যথা, প্রসাবের গন্ধ পরিবর্তন, অথবা ঘোলা প্রসাব।
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মায়ের শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। আর তার মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটি উপাদান হলো ক্যালসিয়াম ও আয়রন। এই দুইটি পুষ্টির অভাবে দেখা দিতে পারে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের কিছু জটিলতা। যেসব খাবার থেকে আয়রন ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় সেগুলো বিশ্লেষণ করা হলো। আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গুলো হলো- লাল শাক, কলিজা, ডিমের কুসুম, কুমড়োর বীজ ও ডাল খেজুর, কিসমিস।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের গুরুত্ব হলো রক্ত শূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ককারী। আয়রন মায়ের শরীরের রক্তের পরিমান বাড়ায়। ভ্রুণের সঠিক বৃদ্ধি ও অক্সিজেন সরবরাহের সহায়তা করে। আয়রন– ক্লান্তি মাথাঘোরা শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যা সমাধান। বাচ্চা প্রসবের সময় রক্তপাত হলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সাহায্য করে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গুলো হলো—দুধ, টক দই, ছোট মাছ, বাদাম, তিল, সবুজ শাকসবজি।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গুলোর গুরুত্ব হল শিশুর হাড় দাঁত ও পেশী গঠনে সাহায্য করে।মায়ের হাড় শক্ত রাখে উহার ক্ষয় করে রোধ করে। ক্যালসিয়াম রক্ত জমাট বাধা ও নার্ভ সিস্টেম ঠিক রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।বাচ্চা প্রসবকালীন সংকোচন ও নার্ভ সংকেত ঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে ক্যালসিয়াম ও আয়রন একসঙ্গে খাওয়া যাবেনা।
কেননা ক্যালসিয়াম ও আয়রন একসঙ্গে খেলে পরস্পরের শোষণের সমস্যা হয়। ভিটামিন সি আয়রনের শোষণ বাড়ায় তাই লেবু বা আমলকির রসের সঙ্গে আয়রনযুক্ত খাবার খান। চা/কফি খাওয়ার আগে পরে কমপক্ষে ১ ঘন্টা আয়রন খাওয়া যাবে না। আয়রন ও ক্যালসিয়াম শুধু মায়ের জন্য নয়। সুস্থ শক্তিশালী ও পূর্ণ বিকশিত একটি শিশুর জন্য অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি মানে একটি নিরাপদ মাতৃত্ব ও একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
গর্ভাবস্থায় পা ফোলা ও ব্যথা কমাতে করনীয়
গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন ঘটে যার মধ্যে পা ফোলা ও ব্যথা হলো একটি সাধারণ সমস্যা। যদিও বিষয়টি খুব স্বাভাবিক তবে বেশ অস্বস্তি কর অনুভব করাই। সময় মত যত্ন না নিলে এই সমস্যা আরো বাড়তে পারে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই সমস্যা কেন হয় এবং এর করনীয় কি। প্রথমেই জানব গর্ভাবস্থায় পা ফোলা ও ব্যথা কেন হয়?
গর্ভকালীন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে শরীরে পানি জমে যায়, যার ফলে পা ফুলে যায়। বাড়তি ওজন ও রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে রক্ত পায়ের নিচে জমে থাকে। এমনকি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকলে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় যার কারণে পা ফুলে যায়। উচ্চ রক্তচাপ বা প্রি এক্ল্যাম্পসিয়া থাকলে সমস্যা বাড়তে পারে।
এই অবস্থায় প্রথমেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া। দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে বা বসে না থাকা।শরীরের অতিরিক্ত লবণ ও পানি বের করার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলতে হবে কারণ অতিরিক্ত লবণ পানি জমতে সাহায্য করে।কলা বাদাম পালং শাক এগুলোতে ম্যাগনেসিয়াম থাকাই রক্ত সঞ্চালণ ও পেশি শিথিলে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময় বসে থাকলে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর আঙ্গুল ও গোড়ালি নড়াচড়া করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় সুষম ও পুষ্টিকর খাবারের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল (ছোলা, মসুর), দুধ ও দই এই জাতীয় খাবারে রয়েছে প্রোটিন। প্রোটিন ভিটামিন ও খনিজ শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশকে সাহায্য করে। লাল মাংস যেমন গরু খাসি, ডিমের কুসুম, পালং শাক, কলমি শাক, ডাল, খেজুর ,কিসমিস এই জাতীয় খাবারের রয়েছে আয়রন। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রক্তশূন্যতা রোধ করে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি কমায়।
দুধ ও দই ,পনির, ছোট মাছ, সাদা তিল, শাকসবজি এগুলো তে রয়েছে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম মা ও শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। সবুজ শাকসবজি কমলা ,কলা, ডাল,বাদাম, এভোকাডো এই জাতীয় খাবারে পাওয়া যায় ফলিক এসিড যা শিশুর মস্তিষ্ক ও নার্ভ বিকাশে সাহায্য করে। কমলা, মালটা,পেয়ারা, স্ট্রবেরি, লেবু, কাঁচামরিচ এজাতীয় খাবারের পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ডিমের কুসুম,মাছ,দুধ,কিছু সময় রোদে বসে থাকা এসবের মধ্যে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়,যা ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়ানোর কাজে সাহায্য করে। আঁশযুক্ত খাবার যেমন ফলমূল- আপেল,পেয়ারা,কলা,শাক সবজি- যেমন পালং শাক, লাউ, শশা ওটস,গোটাগমের রুটি, মসুর ডাল এ ধরনের খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। বাদাম যেমন- কাঠবাদাম, আখরোট, অলিভ,অয়েল, অ্যাভাকাডো, চিয়া শিড, তিসি বীজ এই ধরনের খাবারে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি।
কার্বোহাইড্রেট ও স্বাস্থ্যকর চর্বি গর্ভবতী মায়ের শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহে সাহায্য করে। সুষম খাবার খেলে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা অপুষ্টির ঝুঁকি কমে। উচ্চ রক্তচাপ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি কমায়। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ করলে শিশুর জন্মের পর মায়ের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ আসে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার বৃদ্ধি ও চোখের বিকাশে ভূমিকা রাখে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে শিশুর জন্মের সময় ওজন স্বাভাবিক থাকে এবং অসুস্থ হওয়ার ঝুকি কমে। পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ প্রি -টার্ম ডেলিভারির ঝুকি কমে।
গর্ভাবস্থায় হালকা ব্যায়াম ও হাটার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় হালকা ব্যায়াম ও হাঁটা মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। হালকা ব্যয়াম সুস্থ রাখে মানসিক চাপ কমায় এবং প্রসবকে সহজ করে তোলে। ব্যায়াম ও হাটা রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখে যার ফলে হাত পা ফুলে যাওয়া ও ব্যথা কমে। নিয়মিত হাটা রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হালকা ব্যায়াম অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি রোধ করতে ও প্রসবকে সহজ করতে সাহায্য করে।
নিয়মিত হাঁটা শরীরের সহনশীলতা ও শক্তি বাড়ায় যা স্বাভাবিক প্রসবকে সহায়তা করতে সাহায্য করে। ব্যায়াম ও হাটা ক্লান্তি দূর করে এবং ভালো ঘুম আনতে সাহায্য করে। হালকা ব্যায়াম ও খোলা হাওয়ায় হাঁটা স্ট্রেস ও উদ্বেগ দূর করে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত হাটা হজম শক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। মায়ের শরীরকে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় যা শিশু সুস্থ বিকাশে সাহায্য করে।
নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায় যা শিশুর হৃদযন্ত্রের ভালো রাখে। ব্যায়াম বিশেষ করে কোমর পিঠ ও পায়ের পেশী মজবুত রাখে। ব্যায়াম শরীরের অ্যান্ডোরফিন নিঃসরণ করে যা মনের অবসাদ ও ক্রান্তি কমাই। নিয়মিত ব্যায়াম করলে গর্ভাবস্থায় সক্রিয় থাকা অনেক সময় সিজারিয়ান ডেলিভারি সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় স্বামী বা পরিবারের ভূমিকা
গর্ভাবস্থায় স্বামী ও পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই সময়ে মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটাই বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। গর্ভাবস্থার স্বামী বা পরিবারের ভূমিকা হতে হবে মানসিক সমর্থন দেওয়া। গর্ভাবস্থায় মায়েদের মুড পরিবর্তন হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই মায়ের ভয় দুশ্চিন্তা ও মুড পরিবর্তন ধৈর্য ধরে শোনা সাহস দেওয়া ও ইতিবাচক কথা বলা প্রয়োজন। ভারী কাজ বাজার, রান্না বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে সাহায্য করা।
মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ ও খাবারের সময় মনে করিয়ে দেওয়া। ডাক্তার দেখানো পরীক্ষা করানো ও নিয়মিত প্রেগনেন্সি চেকআপের জন্য পরিবারের যেকোনো সদস্য সাথে যাওয়া। পর্যাপ্ত বিশ্রামের জন্য ঘর শান্ত পরিবেশ রাখা অতিরিক্ত শব্দ এড়িয়ে চলা এড়িয়ে চলা। হালকা হাঁটা, ব্যায়াম, পানি পান ও পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য উৎসাহ দেওয়া। প্রসব ও পরবর্তী সময়ের খরচের জন্য সঞ্চয় এর প্রস্তুতি নেওয়া।
ছোট ছোট যত্নশীল আচরণ যেমন ফল কেটে দেওয়া, মেসেজ করা, মায়ের পছন্দের কাজগুলোতে সঙ্গ দেওয়া ইত্যাদি এগুলোতে ভালোবাসা ও যত্নের প্রকাশ ঘটে।মায়ের উপর অপ্রয়োজনীয় কাজ বা দায়িত্ব না চাপিয়ে দেওয়া বিশেষ করে প্রথম তিন মাস ও শেষের দিকে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। হালকা গল্প একসাথে প্রিয় অনুষ্ঠান বা গান দেখা এসব মায়ের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে যা শিশুর জন্য অনেক ভালো। প্রসব পরবর্তী যত্নের প্রস্তুতি নেওয়া শুধু শিশুর দিকে মনোযোগ দিয়ে নয় মায়ের ও পর্যাপ্ত যত্ন নিতে হবে
গর্ভাবস্থায় ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে কি না?
গর্বভাবস্থায় ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কারন কিছু ব্যথার ওষুধ মা ও শিশুর জন্য নিরাপদ হলেও কিছু ঔষধ ভ্রুনের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ব্যথানাশক ঔষধ খাবেন না। গর্ভাবস্থায় স্বেচ্ছায় ওষুধ খাওয়ার জন্য ভ্রুনের ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত ডাক্তাররা হালকা ব্যথা বা জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল দিয়ে থাকেন।
গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও তুলনামূলক নিরাপদ ব্যথানাশক এটি। তবে ডোজ অবশ্যই ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী নিতে হবে। আইবুপ্রোফেন, ডাইক্লোফেনাক, ন্যাপ্রোক্সেন ইত্যাদি এই ধরনের ওষুধ গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে খাওয়া বিপদজনক । শক্তিশালী ব্যথানাশক যেমন কোডিন,ট্রামাডল শুধু খুব প্রয়োজন হলে এবং কঠোর মেডিকেল তত্ত্বাবধানের পর এটি দেওয়া হয়। এমনকি এই ঔষধ খাওয়ার ফলে শিশুর শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি থাকে।
কিছু ব্যথানাশক মলম বা স্প্রে লাগালে সাধারণত ঝুঁকি কম কিন্তু কিছু উপাদান যেমন ডাইক্লোফেনাক জেল অতিরিক্ত লাগালে রক্তে শোষিত হয়ে প্রভাব ফেলতে পারে।আবার অনেকেই ভাবেন হারবাল মানে নিরাপদ কিন্তু কিছু ভেষজ গর্ভাবস্থার রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এইগুলো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।গর্ভাবস্থায় ব্যথা হলে কিছু ঘরোয়া উপায়ে ব্যথা কমানোর উপায় হলো- হালকা গরম সেক দেওয়া পেট বা পিঠে নয় শুধু ব্যথা স্থানে। পর্যাপ্ত পানি পান ও সুষম খাবার খাওয়া। হালকা স্ট্রেচিং বা হাঁটতে হবে। শুধু নিরাপদ অংশে এবং বিশেষজ্ঞ দ্বারা মেসেজ করা। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম।
গর্ভাবস্থায় পানি খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ সময় শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায় এবং মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য পানি অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। শরীরে হাইড্রেট রাখে। গর্ভাবস্থায় রক্তের পরিমাণ প্রায় ৫০% বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত পানি পান করলে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। অ্যামনিওটিক ফলুইডের মাত্রা ঠিক রাখে। গর্ভের শিশুকে ঘিরে থাকা পানি তার সুরক্ষা ও বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয়। পানি পান করলে এর সঠিক পরিমাণ বজায় থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। গর্ভাবস্থায় হরমনের কারনে হজম ধীর গতি হয়ে যায়, পানি হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পানি মূত্রনালীর সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত পানি পান করলে প্রসবের মাধ্যমে জীবাণু বের করে দেয় ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। গর্ভাবস্থায় শরীর গরম অনুভুত হতে পারে পানি শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। ফোলা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
অনেক সময় মনে হয় ফোলা কমাতে পানি কম খেতে হবে আসলে পর্যাপ্ত পানি খেলে টক্সিন বের হয় এবং ফোলা কিছুটা কমে। পানি ক্লান্তি ও মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পানি শূন্যতা ক্লান্তি ও মাথা ব্যথা বাড়ায় পানি এই সমস্যাগুলো দূর করে। পানি পুষ্টি উপাদানকে মায়ের শরীর থেকে শিশুর কাছে পৌঁছে দেয় যা শিশুর বৃদ্ধি ও অঙ্গ গঠনে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন গড়ে ২.৫ – ৩ থেকে লিটার পানি পান করা করতে হবে তবে খুব গরম আবহাওয়া বা ব্যায়ামের সময় আরো বেশি পানি পান করতে হবে।
দিনে ছোট ছোট বিরতিতে পানি পান করতে হবে একসাথে বেশি পানি না খেয়ে সারাদিনে ধীরে ধীরে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। খাবারের ৩০ মিনিট আগে পানি খেতে হবে এতে হজমে সহায়তা করে। খাবারের সময় অতিরিক্ত পানি না খাওয়াই ভালো। গরমে বা বাইরে কাজ করলে অতিরিক্ত পানি খেতে হবে।
অতিরিক্ত ঘাম হলে শরীরের পানির দ্রুত কমে যায় তাই সেই সময় পানি বেশি খেতে হবে। বাইরে গেলে সবসময় পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। অতীত ঠান্ডা পানি বেশি না খাওয়াই ভালো কারণ এটি গলা ব্যথা বা হজমে সমস্যা করতে পারে। সবসময় পরিষ্কার ও নিরাপদ পানি পান করতে হবে বিশেষ করে টিউবওয়েল, ফিল্টার বা ফুটানো পানি।
গর্ভাবস্থায় বিশ্রামের সময়সূচী
গর্ভাবস্থায় বিশ্রামের সময়সূচি ঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ সময় শরীর ও মন দুটোই অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম শিশুর সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় শুধু বিশ্রাম বা ঘুমানো নয় মনকে আরাম দেওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি ও মেনে চলতে হবে। রাতের নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের পূর্ণ গঠন ও শিশুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
দুপুরে হালকা ঘুম 20 থেকে 60 মিনিটের ঘুম ক্লান্তি কমায় মাথা সতেজ রাখে। বসে বা শুয়ে পা কিছুটা উঁচু করে রাখলে ফোলা ও রক্ত সঞ্চালন সমস্যা কমে। মেডিটেশন কোরআন তেলাওয়াত গান শোনা বা বই পড়া মানসিক চাপ কমায়। বিশ্রামের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যেমন বাম কাত হয়ে শোয়া।
বাম কাতে শোয়া সবচেয়ে উপকারী কারণ এতে প্লাসেন্টাই রক্ত প্রবাহ ভালো হয়। ঘুমের সময় পায়ের মাঝে পেটের নিচে বা পিঠে বালিশ ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়। দীর্ঘ সময় চিত হয়ে সোয়া
এড়িয়ে চলতে হবে কেননা এতে গর্ভের ওজন রক্তনালীতে চাপ পড়তে পারে। হালকা ঢিলাঢালা ও আরামদায়ক পোশাক পরে বিশ্রাম নিতে হবে। খুব বেশি সময় এক ভাবে বসে বা শুয়ে থাকা যাবেনা।
গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক সম্পর্ক কতটা নিরাপদ
গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রে নিরাপদ হতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে মায়ের স্বাস্থ্য ও গর্ভাবস্থার ধাপ এবং কোন জটিলতা আছে কিনা তার উপরে। সঠিক বিষয় জানলে ভয় কমবে আর ভুল করলে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তবে জানতে হবে কখন শারীরিক সম্পর্ক নিরাপদ। গর্ভাবস্থার সময় গর্ভফুল অ্যামনিওটিক থলে ও সার্ভিক্সের শক্ত টিস্যু শিশু শিশুকে সুরক্ষিত রাখে।
স্বাভাবিক ও জটিলতা মুক্ত প্রেগনেন্সিতে ডাক্তার অনুমতি দিলে পুরো গর্ভকালে শারীরিক সম্পর্ক রাখা যেতে পারে।হালকা ভঙ্গি বেছে নেওয়া উচিত যাতে পেটে চাপ না পরে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মায়ের যোনি ও জরায়ুর রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ফলে শারীরিক সম্পর্কের সময়ে কিছু নারীর সমস্যা হতে পারে। এমনকি কিছু যোনিতে শুকনো ভাব হতে পারে তাই প্রয়োজন হলে লুব্রিক এর ব্যবহার করতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধাপে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়গুলো হলো –প্রথম ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে অনেক মায়ের এই সময় গর্ভধারণের শুরুর সাইড ইফেক্ট, যেমন বমি ক্লান্তি বেশি থাকে তাই স্বাভাবিকভাবে শারীরিক সম্পর্ক কম থাকে একেবারে এড়িয়ে চলা হয়। তবে ঝুঁকি না থাকলে নিরাপদ।৪ ও ৬ মাসে এই সময় শারীরিক সম্পর্কের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় বলে ধারণা করা হয় কারণ বেশিরভাগ গর্ভবতী মা তখন সুস্থ ও শক্তিশালী বোধ করেন।
৭ ও ৯ মাসে পেট বড় হওয়ায় আরামদায়ক ভঙ্গি খুঁজে নিতে হয় এবং ঝুঁকি বেশি থাকে। সতর্ক থাকতে হবে যদি ডাক্তারের নির্দেশ থাকে শারীরিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলার তা অবশ্যই মানতে হবে। সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর জন্য পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরী। সম্পর্কের পর রক্তপাত ব্যথা বা অন্য কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা ও প্রতিকার
গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এই সমস্যার ফলে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গর্ভাবস্থায় রক্তের পরিমাণ বেড়ে গেলে আয়রনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আর যদি যথেষ্ট আয়রন না পাওয়া যায় তাহলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতার কারন হল –আয়রনের ঘাটতি, গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে রক্তের পরিমাণ প্রায় 30 থেকে 50% বৃদ্ধি পায় এজন্য আয়রনের চাহিদাও অনেক বেশি হয়।
কারণ আয়রন দিয়ে রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরি হয়। যদি পর্যাপ্ত আয়রন না পাওয়া যায় তবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি, ভিটামিন বি১২ রক্ত কণিকা তৈরি ও তাদের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। এই উপাদান গুলোর ঘাটতিও রক্তশূন্যতার কারন হতে পারে। অতিরিক্ত রক্তপাত বা মাসিক বন্ধ না হওয়া যে কোন কারনে, যাদের পেটের বা মায়ের শরীরের অন্যত্র রক্তপাত হয় হিমোগ্লোবিনের কমতি অন্য কোন কারণে ও হতে পারে।
যেমন পারাসাইট বা অন্যান্য সংগ্রামের কারণে। অপর্যাপ্ত পুষ্টি বা খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো না করা, প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া সবজি ও ফলের অভাব রক্তশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ায়। বাংলাদেশে অনেক গর্ভবতী মহিলা আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খুব কম খায়।যার কারনে এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়।রক্তশূন্যতার প্রভাব মায়ের উপর যেভাবে পড়ে–অবসাদ, মনোযোগের অভাব, ঘুমের সমস্যা, কম অক্সিজেন সরবরাহ যা প্রসবের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
হার্টের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। শিশুর ওপর যে প্রভাব গুলো পড়ে সেগুলো হলো–বাচ্চার গড় বৃদ্ধি কমে যায়, সময়ের আগে জন্ম হতে পারে, জন্মের সময় ওজন কম হতে পারে, কিছু ক্ষেত্রে জন্মগত সমস্যা হতে পারে। রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কিছু করণীয় হলো –প্রতিদিন পর্যাপ্ত সুষম খাবার, সবুজ শাকসবজি ও শস্য খাবার খেতে হবে।
চা বা কফির সাথে দুধ মিশিয়ে না খেয়ে আলাদাভাবে দুধ খেতে হবে।ভিটামিন সি বেশি আছে এমন ফল খেতে হবে যেমন লেবু, কমলা, আমলকি। নিয়মিত হেলথ চেকআপ ও হিমোগ্লোবিন মাপতে হবে। গর্ভাবস্থায় আয়রন সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত খেতে হবে। শরীর ভালো রাখার জন্য যথেষ্ট ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে।
আমাদের এই আর্টিকেলটিতে একজন গর্ভবতী নারীর গর্ভাবস্থার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার ও ব্যায়ামের উপকারিতা বুঝানো হয়েছে।গর্ভকালিন বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে নিস্তারের ঘরোয়া ও কার্যকরী ট্রিকস তুলে ধরা হয়েছে। আমি আশা করছি সুস্থ বাচ্চা প্রসাবের জন্য আমার এই আর্টিকেলটি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বর্ণনাকৃত পদ্ধতি গুলো প্রয়োগের আগে অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। অন্যথায় আমি দায়ী নয়। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url