বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দিতে কি লাগে

প্রতিবছর সৈনিক পদের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকেন। এই পদে  নির্দিষ্ট লোক সংখ্যা নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দিতে কি কি লাগে তা জানতে আমাদের সাথে থাকুন। 

বাংলাদেশ-সেনাবাহিনীর-সৈনিক-পদে-যোগ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকরি করার স্বপ্ন প্রায় প্রতিটি ছেলে মেয়ের। আর এই স্বপ্ন পূরণের জন্য কি কি প্রয়োজন অজানা থাকলে সেটা জানুন নিচের অংশগুলো পড়ে খুব সহজে। 

পেজ সুচিপত্রঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দিতে কি লাগে

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দিতে কি লাগে

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দিতে কি লাগে তা হলো সাধারণত এসএসসি ও সমমান শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আবেদন করা যায়। সামাজিকভাবে সুযোগ-সুবিধা বিচারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দিতে যোগ্যতার প্রয়োজন । আর এই যোগ্যতাগুলো থাকলে খুব সহজেই চাকরি পাওয়া যায়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন। 

সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে কি কি লাগে

সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে মূলত কিছু ডকুমেন্ট প্রয়োজন। সেগুলো হল: এসএসসি বা সমমান সনদ মার্কশিট। জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট বা জাতীয় পরিচয় পত্র। ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। পিতা-মাতার বা অভিভাবকের  সম্মতিপত্র। চরিত্র সনদপত্র (এটি স্থানীয় চেয়ারম্যান এর কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে)। এই ডকুমেন্টগুলো থাকলে আপনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে পারবেন খুব সহজে। এই ডকুমেন্টগুলো না থাকলে আপনি আবেদন করতে পারবেন না। 

সেনাবাহিনীতে কত পয়েন্ট লাগবে

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দিতে এসএসসি পরীক্ষার নির্দিষ্ট সংখ্যক GPA বা পয়েন্ট প্রয়োজন। তবে ট্রেড অনুযায়ী পয়েন্ট প্রয়োজন। যেমন জেনারেল ট্রেড (GD)- GPA 2.00। অন্যান্য ট্রেড যেমন Tech / Clerk / Driver  এইগুলোতে প্রয়োজন GPA 3.00। ও MODC(Army Medical Corps) এ প্রয়োজন GPA 2.50 বা 3.00। পয়েন্ট গণনা সময় শুধুমাত্র এসএসসি পয়েন্ট গণনা করা হয়। 

সেনাবাহিনীতে কত ফুট উচ্চতা লাগে 2025

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে নিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট উচ্চতা প্রয়োজন। তবে পুরুষ ও মহিলার উচ্চতার মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষের উচ্চতা হতে হবে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ( ১.৬৮মিটার)। তবে আদিবাসী পুরুষদের  ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন। এদের পুরুষদের উচ্চতা হতে হবে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি (১.৬৩ মিটার)। আর মহিলার উচ্চতা হতে হবে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি (১.৬০ মিটার) ।আদিবাসী মেয়েদের হতে হবে ৫ ফুট ১ ইঞ্চি (১.৫৬ মিটার)। 

সেনাবাহিনীর পদ ও বেতন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদ রয়েছে এবং পদ অনুযায়ী তাদের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। এবং তাদের পদ অনুযায়ী তাদের সুযোগ সুবিধা ও আলাদা। নিচে পদ অনুযায়ী আনুমানিক বেতন দেওয়া হল। সৈনিক ১০,২০০ – ২৪,৬৮০ টাকা, ল্যান্স নায়েক ১১,০০০ – ২৫,০০০ টাকা, নায়েক ১,৩০০ – ২৬,০০০ টাকা,  হাবিলদার ১১,৫০০ – ২৭,০০০ টাকা, ওয়ারেন্ট অফিসার ১২,০০০ – ২৮,০০০ টাকা, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার ১২,৫০০ – ৩০,০০০ টাকা।

জুনিয়র কমিশন্ড  ও কমিশন্ড অফিসার এর পদ ও আনুমানিক   বেতন নিচে দেওয়া হল। ক্যাডেট (চাকরির ট্রেনিং পর্যায়) ১০,০০০ – ১২,০০০ টাকা ভাতা, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট ২২,০০০ – ৫৩,০৬০ টাকা,লেফটেন্যান্ট ২৩,০০০ – ৫৫,০০০ টাকা, ক্যাপ্টেন ২৫,০০০ – ৬০,০০০ টাকা, মেজর ২৯,০০০ – ৬৫,০০০ টাকা ।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ৩৫,৫০০ – ৭২,০০০ টাকা, কর্নেল ৪২,০০০ – ৮০,০০০ টাকা,ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ৫০,০০০ – ৯০,০০০ টাকা, মেজর জেনারেল ৬০,০০০ – ৯৫,০০০ টাকা, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ৭৫,০০০ – ১,০০,০০০ টাকা, জেনারেল (Army Chief)৮৬,০০০ – ১,১০,০০০ টাকা।

সেনাবাহিনীতে মেয়েদের যোগ্যতা কি কি লাগে

এখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন হয়ে উঠেছে  অনেক মেয়ের।এমনকি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সৈনিক পদে চাকরি পাওয়ার দিক থেকে মেয়েদের সুবিধা অনেক। খুব সহজেই মেয়েদের চাকরি পাওয়া সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট  যোগ্যতা ও শারীরিক মানদণ্ড। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দিতে কি কি  লাগে সেগুলো নিচে দেওয়া হল।

যোগ-দিন-বাংলাদেশ-সেনাবাহিনী

শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী দুই ধরনের পদ রয়েছে  সৈনিক পদ (মহিলা সৈনিক / মহিলা মেডিকেল কোর ইত্যাদি।কমিশন্ড অফিসার (Long Course / Direct Entry Officer)।মহিলা সৈনিক পদের জন্য প্রয়োজন এস এস সি বা সমমান পাস।এবং বয়স হতে হবে ১৭ থেকে ২০ বছর।  উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি (১.৬০ মিটার)ওজন ন্যূনতম ৪৭ কেজি, বুকের মাপ ২৮ ইঞ্চি (স্বাভাবিক), ৩০ ইঞ্চি (ফুলিয়ে)।চোখ ৬/৬ দৃষ্টিশক্তি (চশমা বা চোখের অসুবিধা গ্রহণযোগ্য নয়)।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আবেদন ফরম ও আবেদন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আবেদন ফরম ও আবেদনের কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে হলে অফিসিয়াল লিংক প্রয়োজন। লিংটি হল  https://joinbangladesharmy.army.mil.bd। ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করতে হবে হোম পেজে থাকা latest circular অপশনে ক্লিক করতে হবে। 

এরপর আপনি যে পদে আবেদন করতে চান সেই পদটি বেছে নিতে হবে। এরপর একটি ফ্রম আসবে সে ফর্মে আপনার তথ্যগুলো দিতে হবে যেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা,জন্ম তারিখ, মোবাইল নাম্বার, ঠিকানা,ইমেইল ইত্যাদি পূরণ করুন। এরপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন যেমন পাসপোর্ট সাইজের ছবি, এসএসসি বা এইচএসসি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট, জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন।

এরপর আবেদন ফি জমা দিতে হবে আপনার ফোন থেকে  এসএমএস বা অনলাইনে বিকাশ/ নগদ  এর মাধ্যমে খুব সহজে ফি জমা দিতে পারবেন। ফি সাধারণত ২০০ থেকে ৫০০ টাকা হয়ে থাকে। এরপর আপনার ফোনে কনফার্মেশন এস এম এস আসবে। এসএমএস পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে মাঠের দিন হাজির হয়ে যাবেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ওয়েবসাইট

ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ যখন পুরোটাই ডিজিটালাইজ করা হচ্ছিল তখন সেনাবাহিনীর কার্যক্রম ডিজিটালাইজ করার জন্য ওয়েবসাইটের ব্যবহার করা হচ্ছে। ওয়েবসাইট ব্যবহার করার মাধ্যমে সকল ধরনের তথ্য স্টোর করে রাখা যায় এবং যেকোনো তথ্য ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।

বিভিন্ন ধরনের তথ্য নেওয়ার জন্য কোথাও যেতে হয় না নিজেই ঘরে বসে বা হাতে থাকা ফোন দিয়ে জেনে নেওয়া যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট টি হল: army.mil.bd। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন বাংলাদেশ  সেনাবাহিনী। 

সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে কত টাকা লাগে

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দিতে কি লাগে সে বিষয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। এখন জানবো সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে  আদৌ  টাকা লাগে নাকি যোগ্যতার মাধ্যমে চাকরি পাওয়া সম্ভব।  বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে একজন সৈনিক হিসাবে চাকরি করার স্বপ্ন অনেক ছেলেমেয়ের।

অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেও অনেক মেধাবী ছেলে মেয়ে প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখে একজন বাংলাদেশ সৈনিক হওয়ার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি পেতে কোন ধরনের অর্থ লাগেনা। নিয়ম তান্ত্রিক মেধাবৃত্তিক ভাবে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য আপনার খরচ হতে পারে শুধুমাত্র ফ্রম ফি,যাওয়া আসা খরচ বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিজস্ব খরচ। 

অনলাইনে আবেদন ফ্রি ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে এই ফি পদের ওপর নির্ভর করে। চিকিৎসা  স্বাস্থ্য পরীক্ষা এটা ব্যক্তিগত খরচে  হয়ে থাকে । বাইরে থেকে চেকআপ করতে হয়। এমনকি চাকরি হয়ে গেলে ট্রেনিংয়ে যোগদান দেওয়ার পরে খরচ সরকারি ভাবে দেওয়া হয় সেখানে আপনার কোন টাকা খরচ হবে না। 

সেনাবাহিনীতে চাকরির আগে দালাল থেকে সাবধান

সেনাবাহিনীতে চাকরির আগে দালাল থেকে সাবধান এই সতর্কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দালালরা সাধারণত অনেক টাকা দাবি করে এবং বলে এই টাকা হলে চাকরি হয়ে যাবে। আমার সাথে অনেক বড় বা উঁচু কর্মকর্তার পরিচয় আছে। মেডিকেল বা লিখিত পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিব। এপয়েন্টমেন্ট লেটার আমি এনে দেব কোন চিন্তা নেই।

এই ধরনের কথা সম্পূর্ণ ভুয়া ও প্রতারক দালালরা বলে থাকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি শৃংখল পূর্ণ স্বচ্ছ মেধাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান।এখানে ঘুষ ছাড়াই চাকরি হয়। প্রতারক ও দালাল টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া। এমনকি এধরনের কোন দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাঠে দাঁড়ালে আপনার চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা অনেক বেশি।

কারণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজ যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে চাকরি প্রদান করে থাকেন। এমনকি সেই সেনাবাহিনী কে নিয়ে গর্ব করে থাকেন কেননা সে তার নিজের যোগ্যতায় সে চাকরি লাভ করে। তাই এই ধরনের দালাল থেকে সাবধান থাকুন। 

লেখকের মন্তব্যঃবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দিতে কি লাগে

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দিতে কি লাগে এই ধরনের প্রশ্ন সহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর উপরে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আবেদন করা নিয়ে ভুল ভ্রান্তি আপনার মনে থাকলে অবশ্যই পোস্টটি পড়ুন। তাহলে সকল ধরনের বাজে চিন্তাভাবনা দূর হয়ে যাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কে নিয়ে। এখানে দালালের কোন স্থান নেই যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হয়। ধন্যবাদ।





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
DMCA.com Protection Status